রবীন্দ্রসংগীতে অধ্যাত্মভাবনা ও রবীন্দ্রনাথ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তাঁর গান।এই গানের মধ্য দিয়েই তাঁর অন্তরের গভীর অনুভূতির কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন।গান চতুমাত্রিক সৃষ্টি বলে নির্দেশিত হয়েছে। যথা --- বাক্য , অর্থ , তাল বা ছন্দ এবং সুর। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করবার জন্য এই চারটি মাত্রা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রসংগীতে এই চারটি মাত্রাই পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। রবীন্দ্রসংগীতের এক বিরাট আয়তন অধ্যাত্মভাবনায় পূর্ণ। কবির জীবনচরিত আলোচনা করলে বোঝা যায় যে, তাঁর সমস্ত জীবনটাই অধ্যাত্মভাবনায় আবর্তিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সৃষ্টির মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে এই ভাবনা । এই গ্রন্থে তাঁর সংগীতে কত বিচিত্রভাবে অধ্যাত্মচেতনার প্রকাশ ঘটেছে তারই একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়ার প্রয়াস করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আলোচিত হয়েছে তাঁর নিজের অধ্যাত্মস্বরূপের দিকটিও। রবীন্দ্রগীতিপ্রেমিকের কাছে গ্রন্থটি নি:সন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের লেখক কৃত ব্যাখ্যা নিচে উদ্ধৃত হ'ল ---
ওহে জীবনবল্লভ , ওহে সাধনদুর্লভ
(গীতবিতান , প্রথম খন্ড , পূজা পর্ব, ৪৮০ নং গান )
ওহে জীবনবল্লভ , ওহে সাধনদুর্লভ
(গীতবিতান , প্রথম খন্ড , পূজা পর্ব, ৪৮০ নং গান )
" পরিপূর্ণ আত্মনিবেদনের সুর গানটির মধ্যে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। ভগবৎ-সাধনার এ-ই শেষ কথা। হে ঈশ্বর , নিজের মর্মকথা অন্তরব্যাথা কিছুই তোমাকে জানাব না , জীবন-মরণ সবই তোমার চরণে সমর্পণ করলাম। সংসারপথ কণ্টকময়। আমি সর্বদা তোমার প্রেমমূর্তি হৃদয়ে স্মরণ করব। সুখ-দুঃখ , প্রিয়-অপ্রিয় সবই মূল্যহীন। তুমি যা সমর্পণ করবে, তা-ই আমি গ্রহণ করব।তোমার চরণে যদি কোন অপরাধ করে থাকি , যদি ক্ষমা না কর , হে প্রিয় , তার জন্য শাস্তি দিও , কিন্তু ফেলে দিও না। জীবনশেষে চরণে টেনে নিও। তুমি যে আমার সর্বস্ব।এই ভবসংসার মৃত্যুর কবলে
আচ্ছন্ন। "
No comments:
Post a Comment