ভাবপ্রকাশের ইচ্ছে মানুষের সহজাত। এর থেকেই সৃষ্টি হয় ভাষার। গদ্যভাষায় সব ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেই কবিতা এবং গীতিকবিতার সূত্রপাত। কবিতায় সুরের প্রকাশ নেই , আছে স্বরের প্রক্ষেপণ। আছে অর্থ , ছন্দ , অলংকার। কবিতায় ছন্দ ও অলংকারের সহায়তায় মানুষ নিজেকে আরো পরিশুদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারে। তবে ছন্দ ও অলংকার কাব্যের মূল বৈশিষ্ট্য নয়। রসই হলো কবিতা বা কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়। রচনা কতখানি রসমধুর হয়ে উঠেছে তার দ্বারাই কবিতার সার্থকতা বিচার করা হয়। 'কুঁড়ি ' গ্রন্থে গদ্য ও পদ্য দুই জাতীয় কবিতাই স্থান লাভ করেছে । কবিতাগুলির ভাব ও ছন্দের বৈচিত্র্য গ্রন্থটিকে মাধুর্য্যমন্ডিত করে তুলেছে। গ্রন্থটি লেখকের প্রথম কবিতাগ্রন্থ , সেইজন্যে এর নামকরণ করা হয়েছে 'কুঁড়ি'।সহজ ও গভীর দুই ভাবের কবিতাই গ্রন্থটিতে বিদ্যমান। কবিতাপ্রেমিকের চিত্তে কবিতাগুলি স্বল্প হলেও সুগন্ধ সঞ্চার করবে। পরিশেষে গ্রন্থটির একটি কবিতা পাঠকবৃন্দের আস্বাদনের জন্য নিচে উদ্ধৃত করা হলো :
স্মৃতি
মনে পড়ে ছেলেবেলার বাঁশীওয়ালার গান।মনে পড়ে দিবানিশি পাখির কলতান।মনে পড়ে সজনে ফুলের অপরূপ সে সাজ।মনে পড়ে পুকুরঘাটে গাঁয়ের বধূর লাজ।মনে পড়ে সরষেক্ষেতের আগুন-রাঙা রঙ।মনে পড়ে চড়ুই পাখির মুখের মধুর ঢঙ।মনে পড়ে দুপুরবেলার ফেরিওয়ালার ডাক।মনে পড়ে পূজোর দিনে বাজত কেমন ঢাক।মনে পড়ে ঝোড়ো হাওয়ায় শুকিয়ে যাওয়া বুক।মনে পড়ে ভূতের ভয়ে কেঁপে ওঠা মুখ।মনে পড়ে বৃষ্টি-ঝরা সিক্ত বাদল রাত।মনে পড়ে বুকের পরে মায়ের কোমল হাত।মনে পড়ে মস্ত উঁচু জাম গাছটির কথা।সেসব স্মৃতি মনের মাঝে জাগায় শুধু ব্যথা।
No comments:
Post a Comment