Saturday, November 2, 2019

রবীন্দ্রসংগীতে অধ্যাত্মভাবনা ও রবীন্দ্রনাথ : মিহিরকুমার রায়

                     রবীন্দ্রসংগীতে অধ্যাত্মভাবনা ও রবীন্দ্রনাথ   

 রবীন্দ্রসংগীতে অধ্যাত্মভাবনা ও রবীন্দ্রনাথ : মিহিরকুমার রায়

                    

        কবিগুরু  রবীন্দ্রনাথের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তাঁর গান।এই গানের মধ্য দিয়েই তাঁর অন্তরের গভীর অনুভূতির কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন।গান চতুমাত্রিক  সৃষ্টি বলে নির্দেশিত হয়েছে। যথা --- বাক্য , অর্থ , তাল বা ছন্দ এবং সুর। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করবার  জন্য এই চারটি মাত্রা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রসংগীতে এই চারটি মাত্রাই পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান।  রবীন্দ্রসংগীতের এক বিরাট আয়তন অধ্যাত্মভাবনায় পূর্ণ। কবির জীবনচরিত আলোচনা করলে বোঝা যায় যে, তাঁর সমস্ত জীবনটাই অধ্যাত্মভাবনায় আবর্তিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সৃষ্টির মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে এই ভাবনা । এই গ্রন্থে তাঁর সংগীতে কত বিচিত্রভাবে অধ্যাত্মচেতনার প্রকাশ ঘটেছে তারই একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়ার প্রয়াস করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আলোচিত হয়েছে তাঁর নিজের  অধ্যাত্মস্বরূপের দিকটিও। রবীন্দ্রগীতিপ্রেমিকের কাছে গ্রন্থটি নি:সন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এ প্রসঙ্গে  রবীন্দ্রনাথের একটি গানের লেখক কৃত ব্যাখ্যা নিচে উদ্ধৃত হ'ল ---
                                     ওহে জীবনবল্লভ , ওহে সাধনদুর্লভ

                                                      (গীতবিতান , প্রথম খন্ড , পূজা পর্ব,  ৪৮০ নং গান )
                                                                                              
 রবীন্দ্রসংগীতে অধ্যাত্মভাবনা ও রবীন্দ্রনাথ : মিহিরকুমার রায়

    " পরিপূর্ণ আত্মনিবেদনের সুর গানটির মধ্যে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। ভগবৎ-সাধনার এ-ই শেষ কথা। হে ঈশ্বর , নিজের মর্মকথা অন্তরব্যাথা কিছুই তোমাকে জানাব না , জীবন-মরণ সবই তোমার চরণে সমর্পণ  করলাম। সংসারপথ কণ্টকময়। আমি সর্বদা তোমার প্রেমমূর্তি হৃদয়ে স্মরণ করব। সুখ-দুঃখ , প্রিয়-অপ্রিয় সবই মূল্যহীন। তুমি যা সমর্পণ করবে, তা-ই আমি গ্রহণ করব।তোমার চরণে যদি কোন অপরাধ করে থাকি , যদি ক্ষমা না কর , হে প্রিয় , তার জন্য শাস্তি দিও , কিন্তু ফেলে দিও না। জীবনশেষে চরণে টেনে নিও। তুমি যে আমার সর্বস্ব।এই  ভবসংসার মৃত্যুর কবলে
আচ্ছন্ন। "   
 রবীন্দ্রসংগীতে অধ্যাত্মভাবনা ও রবীন্দ্রনাথ : মিহিরকুমার রায়
  

Friday, October 18, 2019

কুঁড়ি : মিহিরকুমার রায়

     ভাবপ্রকাশের ইচ্ছে মানুষের সহজাত। এর থেকেই সৃষ্টি হয় ভাষার। গদ্যভাষায় সব ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলেই কবিতা এবং গীতিকবিতার সূত্রপাত। কবিতায় সুরের প্রকাশ নেই , আছে স্বরের প্রক্ষেপণ। আছে অর্থ , ছন্দ , অলংকার। কবিতায় ছন্দ ও অলংকারের সহায়তায় মানুষ নিজেকে আরো পরিশুদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারে। তবে ছন্দ ও অলংকার কাব্যের মূল বৈশিষ্ট্য নয়। রসই হলো কবিতা বা কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়।  রচনা কতখানি রসমধুর হয়ে উঠেছে তার দ্বারাই  কবিতার  সার্থকতা বিচার করা হয়। 'কুঁড়ি ' গ্রন্থে গদ্য ও পদ্য দুই জাতীয় কবিতা স্থান লাভ করেছে । কবিতাগুলির ভাব ও ছন্দের বৈচিত্র্য গ্রন্থটিকে  মাধুর্য্যমন্ডিত  করে তুলেছে। গ্রন্থটি লেখকের প্রথম কবিতাগ্রন্থ , সেইজন্যে এর নামকরণ করা হয়েছে  'কুঁড়ি'।সহজ ও গভীর দুই ভাবের  কবিতাই গ্রন্থটিতে  বিদ্যমান। কবিতাপ্রেমিকের চিত্তে কবিতাগুলি স্বল্প হলেও সুগন্ধ সঞ্চার করবে। পরিশেষে গ্রন্থটির একটি কবিতা পাঠকবৃন্দের আস্বাদনের জন্য নিচে উদ্ধৃত করা হলো :
  স্মৃতি
                                             মনে পড়ে ছেলেবেলার বাঁশীওয়ালার গান।
                                             মনে পড়ে দিবানিশি পাখির কলতান।
                                             মনে পড়ে সজনে ফুলের অপরূপ সে সাজ।
                                             মনে পড়ে পুকুরঘাটে গাঁয়ের বধূর লাজ।
                                             মনে পড়ে সরষেক্ষেতের আগুন-রাঙা রঙ।
                                             মনে পড়ে চড়ুই পাখির মুখের মধুর ঢঙ।
                                             মনে পড়ে দুপুরবেলা ফেরিওয়ালার ডাক।
                                             মনে পড়ে পূজোর দিনে বাজত কেমন ঢাক।
                                             মনে পড়ে ঝোড়ো হাওয়ায় শুকিয়ে যাওয়া বুক।
                                             মনে পড়ে ভূতের ভয়ে কেঁপে ওঠা মুখ।
                                             মনে পড়ে বৃষ্টি-ঝরা সিক্ত বাদল রাত।
                                             মনে পড়ে বুকের পরে মায়ের কোমল হাত।
                                             মনে পড়ে মস্ত উঁচু  জাম গাছটির কথা।
                                             সেসব স্মৃতি মনের মাঝে জাগায় শুধু ব্যথা।